কক্সবাজারে পাচারের সময় ২০ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ৮ কেজি ৩৯৮ গ্রাম তিমি মাছের বমি (অ্যাম্বারগ্রিস) উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়া এলাকা থেকে চালানটি জব্দ করা হয়। এ সময় শামসুল আলম নামে এক পাচাকারীকে আটক করা হয়। তিনি সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের বাসিন্দা।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত টহলের সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়ায় অভিযান চালিয়ে শামসুল আলম নামে একজনকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছে থাকা একটি বস্তা থেকে ৮ কেজি ৩৯৮ অ্যাম্বারগ্রিস (তিমি মাছের বমি) উদ্ধার করা হয়। পরে উদ্ধারকৃত অ্যাম্বারগ্রিস (তিমি মাছের বমি) বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট, কক্সবাজারে পরীক্ষা করে অ্যাম্বারগ্রিসের বৈশিষ্ট্য এবং শনাক্ত সম্পন্ন করা হয়।
বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহীউদ্দীন আহমেদ বলেন, অ্যাম্বারগ্রিসে সিনথেটিক পদার্থের মিশ্রণের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, অ্যাম্বারগ্রিস চোরাচালানের উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাচার করে চোরাকারবারি যে কোনোভাবে গ্রহণ করে এবং বাংলাদেশে নিয়ে আসে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তির উদ্বৃত্তি দিয়ে তিনি বলেন, শামসুল আলম অ্যাম্বারগ্রিসের চালান তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির চেষ্টা করে। অ্যাম্বারগ্রিস মূলত বিভিন্ন উন্নত দেশে চোরাচালান করা হয় এবং অ্যাম্বারগ্রিস হতে বিভিন্ন মূল্যবান পারফিউম ও ওষুধ তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে এ ধরনের মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য জিনিসের চোরাচালান অত্যন্ত বিরল ঘটনা
অ্যাম্বারগ্রিস আসলে কি?
ফরাসি শব্দ অ্যাম্বার আর গ্রিস মিলে ইংরেজি অ্যাম্বারগ্রিস শব্দটি এসেছে। মূলত, স্পার্ম তিমির পেটে তৈরি হয় এই অ্যাম্বারগ্রিস। সুগন্ধি আর ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয় অ্যাম্বারগ্রিস। বিশ্বের দামি দামি সুগন্ধির সতেজতার নেপথ্যে রয়েছে এটি। দুষ্প্রাপ্য পদার্থটি সুগন্ধির সুবাস বৃদ্ধি করে এবং সংরক্ষণ করে। সুগন্ধিতে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতেও এই অ্যাম্বারগ্রিস কার্যকরী। প্রচলিত চীনা ওষুধে ব্যবহৃত হয় এটি। যে কারণে বিশ্ববাজারে এর কদর বা চাহিদা আকাশচুম্বী।
বিজ্ঞানীদের উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী, মূলত স্পার্ম তিমির পাকস্থলীতে মহামূল্যবান অ্যাম্বারগ্রিস তৈরি হয়। এটি তৈরি হতে অনেক সময় লেগে যায়। এ সময়টা বছরের বেশিও হতে পারে। স্পার্ম তিমি হাজার হাজার স্কুইড খায়। এসব স্কুইডগুলোর মধ্যে অনেকগুলো হজম হয় না। এগুলো পাকস্থলী ও অন্ত্রের মাঝখানের জায়গায় গিয়ে জমা হতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে জমা পড়ে থাকতে থাকতে আর তিমির অন্ত্রের বিভিন্ন রাসায়নিকে এসব স্কুইড অ্যাম্বারগ্রিসে পরিণত হয়। স্পার্ম তিমি পরে তা মুখ দিয়ে বের করে দেয়।
অ্যাম্বারগ্রিস প্রথম অবস্থায় মোমের মতো পিচ্ছিল হয়। তিমির মুখ দিয়ে বের হওয়ার সময় দুর্গন্ধযুক্ত থাকে। তবে সমুদ্রের নোনা জলের সংস্পর্শে আর ঢেউয়ে ঢেউয়ে তীরে ভেড়ার পথে এর দুর্গন্ধটা চলে যায়, সুগন্ধ ছড়াতে থাকে। এটি শক্ত দলায় রূপ নেয়। শুকিয়ে গেলে এটি পাথরের মতো রূক্ষ হয়ে যায়।